ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

৩৬ পদের ২৪ পদই শূন্য

কক্সবাজারে জনবল সংকটে ৯ উপজেলা খাদ্য অফিস

# ৪ উপজেলায় খাদ্য নিয়ন্ত্রক নেই
# টেকনাফ ও ঈদগাঁও’তে পুরো অফিস শূন্য

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::

কক্সবাজারে কর্মকর্তা কর্মচারী সংকটে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে উপজেলা খাদ্য অফিসগুলোতে। অনেকটা জোড়া তালি দিয়েই চলছে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সমূহ। জেলার ৯ উপজেলায় ৩৬ টি পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১২ জন কর্মকর্তা কর্মচারী।

দীর্ঘদিন যাবত ২৪টি গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য থাকায় উপজেলা পর্যায়ের দাপ্তরিক কার্যক্রম অনেকটা শীতিল হয়ে পড়েছে। উপজেলা ভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ পদ গুলো হলো উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রন কর্মকর্তা, খাদ্য পরিদর্শক, উপ খাদ্য পরিদর্শক এবং অফিস সহায়ক কাম কম্পিউটার অপারেটর। ৩৬ টি পদের মধ্যে ২৪ পদ শূন্য থাকায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ যথাসময়ে না হওয়ায় সেবা বঞ্চিত হচ্ছে সেবা প্রার্থীরা।

বর্তমান সময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে উপজেলা খাদ্য অফিস গুলো। এক কর্মকর্তা চালাচ্ছেন ৩ উপজেলা। এমনও অবস্থা রয়েছে কোন উপজেলায় শুধু কার্যালয় আছে কোন কর্মকর্তা কর্মচারী কর্মরত নেই।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় এর উচ্চমান সহকারী নির্মল দাস কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকটের বিষয়টি জ্বালিয়ে দাপ্তরিক কাজের গতি কমে আসার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি আসন্ন নিয়োগ পরীক্ষার পর নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে সংকট কিছুটা কেটে আসবে বলে মনে করেন।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার জেলার নয় উপজেলায় প্রতিটি উপজেলা খাদ্য অফিসে চারটি করে পদ রয়েছে। ৯ উপজেলায় ৩৬ টি পদের মধ্যে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১২ জন। এরমধ্যে সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে চারটি পদের মধ্যে মাত্র একজন কর্মকর্তা কর্মরত রয়েছেন। শূন্য রয়েছে তিনটি পদ।

রামু উপজেলায় চার পদে কর্মরত রয়েছে তিনজন। উখিয়া উপজেলায় চার জনের মধ্যে কর্মরত রয়েছে দুইজন। টেকনাফ উপজেলায় চারটি পদের মধ্যে চারটি পদই শূন্য রয়েছে। মহেশখালী উপজেলায় শুধুমাত্র উপপাদ্য পরিদর্শকের পদ ছাড়া বাকি তিনটি শূন্য রয়েছে।

কুতুবদিয়া উপজেলার অবস্থা আরো সংকটাপন্ন। সেখানে একজন মাত্র কর্মরত রয়েছেন। শূন্য রয়েছে তিনটি পদ। চকরিয়া উপজেলার খাদ্য অফিসে শুধুমাত্র উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ছাড়া বাকি তিনটি পদই শূন্য রয়েছে।

পেকুয়া উপজেলায় চারটি পদের মধ্যে তিনজন কর্মরত রয়েছে। একটি পদ শূন্য রয়েছে। নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলায় চারটি পদের মধ্যে সবগুলো পদইশূন্য রয়েছে।

সদর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান – কক্সবাজার সদরে আমি কর্মরত থাকলেও আমাকে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে মহেশখালী এবং ঈদগাহ উপজেলা খাদ্য অফিসেও। জেলা সদরে হওয়ায় এখানে কাজের চাপও বেশি। একজন উপজেলা কর্মকর্তার পক্ষে তিনটি উপজেলার দায়িত্ব পালন করা কতটুকু কষ্টসাধ্য এবং সময় সাপেক্ষ বিষয় সেটি সহজেই অনুমেয়।

তিনি জানান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ভিজিডি, নতুন করে যোগ হয়েছে টিসিবি। মাঠে চলমান রয়েছে ওএমএস কার্যক্রম, খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি। এছাড়াও মাছ ধরা বন্ধকালীন সময়ে জেলেদের চাল বিতরণ। ভিজিএফ চাল বিতরণ তো রয়েছেই। জনবল ছাড়া অধিকাংশ অফিসে এ কার্যক্রম গুলো পরিচালিত হচ্ছে ফলে স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দক্ষ ও শূন্য পদে জনবল নিয়োগ ছাড়া গতি আনা কাজের যথাযথ বাস্তবায়ন আদৌও সম্ভব নয়। আগামি মাসে জনবল নিয়োগের একটি সুযোগ আছে। হয়ত নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হলে কিছুটা স্বস্তি আসতে পারে।

জনবল সংকটের কারণে দাপ্তরিক কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নবাগত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাইফুল কাদির খান বলেন – আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। কোথায় কোথায় জনবল সংকট তা এখনো দেখার সুযোগ হয়নি। তবে দক্ষ জনবল ছাড়া অফিস চালানো কষ্টসাধ্য। শীঘ্রই উপজেলা ভিত্তিক শুন্য পদের তালিকা দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধতন মহলে পরিসংখ্যান জানাবেন বলে তিনি জানান। দাপ্তরিক কাজের গতি, স্বাভাবিক কার্যক্রম যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারে তিনি জনবল সংকট উত্তরণের কোন বিকল্প নেই বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য অফিসগুলোতে শূন্য পদ পূরন করা না গেলে চরম ক্ষতির মুখে স্বাভাবিক কার্যক্রম। পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের চাল বিতরণ কার্যক্রম প্রকল্প, কাজের বিনিময়ে খাদ্য, টেস্ট রিলিজ, খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি, ধান চাল ক্রয়,ওপেন সেল মার্কেট, ফেয়ার প্রাইজ কার্ডসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। শীগ্রই শূন্য পদ পুরনের বিকল্প নেই বলে মনে করেন সচেতন মহল।

পাঠকের মতামত: